দৈনিক মিথ্যা অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিয়ে সরকারি চাকুরিবিধি লংঘন করে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে সংবাদ সম্মেলন করার জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতিও নেননি।
৩০ জুলাই বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনটি করেছেন কটিয়াদী উপজেলার বেথৈর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা রহমান উর্মি।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে ওই শিক্ষিকার বাবা মশিউর রহমানও একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। অপরদিকে তাহার স্বামী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ আমলে সহকারি শিক্ষিকা উর্মি তাহার স্বামীর অজুহাতে আওয়ামী লীগের দাপট দেখাতেন। উর্মি স্বামী নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলায় বর্তমানে কর্মরত আছে। অপরদিকে ৫ ই আগস্ট এর পর হতে তাহমিনা রহমান উর্মি তাহার পিতার অজুহাতে দাপট দেখাচ্ছেন মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদটি ছিল সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা রহমান উর্মির বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন, প্রধান শিক্ষিকা সাদেকা ইয়াসমিনের সাথে উর্মির দ্বন্দ্ব ও তদন্তকাজে লোকজন নিয়ে উর্মির বাবার চাপ প্রয়োগকে কেন্দ্র করে। উর্মি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রধান শিক্ষিকার বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন গত ৩০ শে জুন ২০২৫। অভিযোগ তদন্ত করার জন্য
কটিয়াদী উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তালুকদার গত ২৩ জুলাই বিদ্যালয়ে অভিযোগের তদন্তে যান। সে সময় সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনার রহমান উর্মি কুলিয়ারচর তাহার বাবার বাড়ির এলাকা থেকে দলীয় বেশ কিছু নেতা-কর্মী নিয়ে বিদ্যালয়ে হাজির করে এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ওপর প্রধান শিক্ষিকাকে বদলির জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে পরদিন ২৪ শে জুলাই বৃহস্পতিবার স্থানীয় এলাকাবাসী উর্মির অপসারণ দাবি করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। মূলত উর্মির এহেন আচরণের ওপরই সংবাদ পরিবেশিত হয়। তাতে সহকারী শিক্ষিকা উর্মি, প্রধান শিক্ষিকা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বক্তব্যও ছাপা হয়েছিল।
এদিকে সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা রহমান উর্মি প্রধান শিক্ষিকার কাছে অসুস্থতার অজুহাতের কথা বলে মঙ্গলবার ৩০ জুলাইয়ের (বুধবার) জন্য নৈমিত্তিক ছুটি চেয়ে একটি ছুটির আবেদন করেন। প্রধান শিক্ষিকা ছুটি মঞ্জুরও করেছেন। কিন্তু ছুটি নিয়ে উর্মি বুধবার কিছু স্বজন মহিলাকে নিয়ে কটিয়াদী সদরের স্বপ্ন কুঞ্জ নামক একটি কমিউনিটি সেন্টারে তাহার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা সংবাদ’ পরিবেশন করানোর অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষিকা সাদেকা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এবং এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনার রহমান উর্মির লিখিত বক্তব্য ইতিমধ্যে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট সরবরাহ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তাহমিনার রহমান উর্মী তাহার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট যে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিকদের সামনে তাহার বর্ণনা দেন এবং প্রধান শিক্ষিকার কিছু অনিয়মের কথাও তুলে ধরেছেন।
প্রধান শিক্ষিকা সাদেকা ইয়াসমিন এই প্রতিনিধিকে জানান, একজন শিক্ষকের বছরে ২০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি পাওনা থাকে। সেই হিসেবেই ছুটির আবেদন মঞ্জুর করেছেন। অপরদিকে
বিভাগীয় অনুমতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তাহমিনা রহমান উর্মি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যখন এলাকার মানুষ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছিল, তখন অনুমতি নিয়েছিল?’ সংবাদ সম্মেলন করার জন্য
অসুস্থতার কথা বলে নৈমিত্তিক ছুটি নিয়েছিলেন কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
অফিস সূত্রে জানা গেছে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন না, যদি না তারা বিশেষভাবে সরকারের অনুমতিপ্রাপ্ত হন অর্থাৎ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রাপ্ত হন । সাধারণত, সরকারি কর্মকর্তারা তাদের দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে প্রেস রিলিজ বা সরকারি বিবৃতির মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করতে পারেন, কিন্তু সংবাদ সম্মেলন করার জন্য সরকারের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর বিধি ২০-এ বলা হয়েছে যে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় কোনো তথ্য বা সরকারি দলিল অন্য কারো সাথে (সংবাদ মাধ্যম সহ) প্রকাশ করতে পারবেন না, যদি না তিনি বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন।
অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ তে সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন অপরাধ এবং তাদের জন্য প্রযোজ্য শাস্তির বিধান রয়েছে। এর মধ্যে অসদাচরণ একটি গুরুতর অপরাধ, এবং সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের নীতি বা সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
অতএব, সরকারি কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলন করার ক্ষেত্রে সরকারের সুস্পষ্ট অনুমতি প্রয়োজন এবং অনুমতি ছাড়া সংবাদ সম্মেলন করলে তা বিধিমালার লঙ্ঘন হতে পারে।
জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলমকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে তাহমিনা রহমান উর্মি কোন অনুমতি গ্রহণ করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষা অফিসার বলেন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগকারী এভাবে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন না।
এদিকে দুই শিক্ষিকার বিদ্যমান দ্বন্দ্বের কারণে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গত ৩০ শে জুলাই প্রধান শিক্ষিকা সাদিকা ইয়াসমিন ও সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনার রহমান উর্মিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে শিক্ষিকাদেরকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট কারণ দর্শানোর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
অনুলিপি দেওয়া হয়েছে মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মিরপুর ঢাকা।, উপ-পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা, ঢাকা বিভাগ, মিরপুর ঢাকা। উপজেলা শিক্ষা অফিসার কটিয়াদী কিশোরগঞ্জ।

Reporter Name 









